আলোর মনি ডটকম ডেস্ক রিপোর্ট: লালমনিরহাটের সপ্তাহখানেক আগেও পাকা সড়কে নিম্নমানের ও নিয়মবহির্ভূত খোয়া ব্যবহারসহ নানা অভিযোগ ওঠার পর কালীগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা রবিউল হাসান কাজ বন্ধ করে দিয়েছিলেন। প্রায় ৫৩লাখ টাকায় সংস্কার ব্যয়ে সেই আড়াই কিলোমিটার পাকা সড়কটির পিচ হাতের টানেই উঠে আসছে। এতে এলাকাবাসী ক্ষুব্ধ হয়ে বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় রাস্তার কাজ বন্ধ করে দেন। জনতার ভয়ে কাজ রেখে পালিয়ে যান ঠিকাদারসহ প্রকৌশলীরা।
জানা যায়, লালমনিরহাট-বুড়িমারী মহাসড়কের কালীগঞ্জ উপজেলার তুষভান্ডার (রাজবাড়ি রোড) থেকে দলগ্রাম (খোকা চেয়ারম্যানের বাড়ি) পর্যন্ত ২হাজার ৬শত মিটার দীর্ঘ ও ১৬ফুট প্রস্থের পাকা সড়কটি সংস্কারের কাজ পান ‘বিনিময় ট্রেডার্স’ নামক ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠান। পরে ওই প্রতিষ্ঠানের কাছ থেকে কাজটি যৌথভাবে তা কিনে নেন লালমনিরহাট জেলার দু’জন ঠিকাদার। গ্রামীণ সড়ক নির্মাণের আওতায় তুষভান্ডার-দলগ্রাম রাস্তা সংস্কারের কাজটি দেখভালের দায়িত্বে ছিলেন স্থানীয় সরকার প্রকৌশলী অধিদপ্তর-এলজিইডি।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, সংস্কার কাজ শুরুর পর থেকেই নিম্নমানের সামগ্রী ব্যবহারের অভিযোগ ওঠে ঠিকাদারদের বিরুদ্ধে। বিষয়টি নিয়ে স্থানীয় লোকজন একাধিকবার কালীগঞ্জ উপজেলা প্রকৌশলী আবু তৈয়ব মোহাম্মদ সামছুজ্জামানকে জানালেও কোনো কাজ হয়নি। সর্বশেষ গত ২ সেপ্টেম্বর স্থানীয় লোকজনের অভিযোগের প্রেক্ষিতে ঘটনাস্থলে আসেন কালীগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা রবিউল হাসান। পাকা সড়ক সংস্কারে ব্যবহৃত খোয়ার ‘থিকনেস’ কমসহ নানান অভিযোগের সত্যতা পেয়ে কাজ বন্ধ রাখার নির্দেশসহ কালীগঞ্জ উপজেলা প্রকৌশলীকে সঠিকভাবে কাজ বুঝে নেওয়ার নির্দেশ দেন। কিন্তু এক সপ্তাহে না যেতেই আবারও নিম্নমানের মানের সামগ্রীসহ একাধিক অভিযোগ উঠতে শুরু করে ঠিকাদারদের বিরুদ্ধে। তাদের পাশাপাশি এলজিইডির দায়িত্বশীল কর্মকর্তাদের বিরুদ্ধে উঠে দায়িত্বে অবহেলার অভিযোগ।
স্থানীয়রা বলেন, রাস্তার কাজ সঠিকভাবে করা হচ্ছে না। নিম্নমানের পিচ (বিটুমিন) ব্যবহার করায় সেগুলো এখন উঠে আসছে।
এলাকাবাসী আরো জানায়, রাস্তার কাজের ব্যাপারে আমরা কিছু বললেই ঠিকাদারের লোকজন আমাদের উপর উল্টো রাগ দেখায়। আর এভাবেই সরকারের টাকা নষ্ট হচ্ছে। তারা নিম্নমানের বিটুমিন দিয়ে কাজ চালিয়ে যাচ্ছে। সে কারণে কার্পেটিং করতে না করতেই তা উঠে যাচ্ছে।
ঘটনাস্থলে উপস্থিত ঠিকাদারের প্রতিনিধি মাসুদ রানা জানান, সড়ক সংস্কারের কাজটি পেয়েছে বিনিময় ট্রেডার্স নামের একটি ঠিকাদার প্রতিষ্ঠান। ওই প্রতিষ্ঠানের কাছ থেকে কিনে দু’জন ঠিকাদার যৌথভাবে কাজটি করছেন। নিম্নমানের বিটুমিন দিয়ে কাজ করার কারণে কার্পেটিং উঠে যাচ্ছে কিনা এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, বৃহস্পতিবার বৃষ্টির সময় কাজটি করায় কিছু অংশের কার্পেটিং উঠে গেছে। এগুলো আবার ঠিক করে দেওয়া হবে।
কাজটি দেখভালের দায়িত্বে থাকা এলজিইডির উপ-সহকারী প্রকৌশলী মাহবুবর রহমান শুক্রবার বিকেলে নিম্নমানের বিটুমিন ব্যবহার হয়নি দাবি করে বলেন, নতুন কার্পেটিংয়ে হাত দিয়ে টানলে সেটি উঠে আসবেই। দুই থেকে তিন দিন পর তা আর উঠে আসে না।
কালীগঞ্জ উপজেলা প্রকৌশলী আবু তৈয়ব মোহাম্মদ সামছুজ্জামান বলেন, আমি একবার গিয়ে নিম্মমানের কাজের প্রমাণ পাওয়ায় তা বন্ধ করে দিয়েছিলাম। বিষয়টি ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে জানানো হয়েছে। আবার পরীক্ষা-নিরীক্ষার পর নিম্নমানের কাজ প্রমাণিত হলে ঠিকাদারের বিরুদ্ধে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।